সত্যিকারের প্রেম কিরকম হয়? এই গল্পটি পরলেই জানতে পারবেন - নবনীর সেই রাত


নবনীকে একা পেয়ে দুষ্টু স্বরে ভাবী বললেন,
-- কি গো ননদিনী এমন আধমরা হয়ে বসে আছো যে?
ভাবীর কথা শুনে নড়েচড়ে বসলো নবনী। নবনীর প্যাঁচামুখ দেখেই ভাবী আচ করে ফেলেছেন কি হয়েছে। তবুও জিজ্ঞেস করলেন। নবনী চুপ করে আছে। একটা মেয়ে হয়েও আরেকজন মেয়ের কাছে ব্যপারটা খুলে বলতে ভয় পাচ্ছে নবনী। কারন সে চায়না ভাবী তাকে খারাপ ভাবুক।

নবনীর নিশ্চুপ অবস্থা দেখে ভাবী আরও জোরে চেপে ধরলেন নবনীর পেট থেকে কথা বের করবার জন্য। শত চেষ্টা করেও নবনীর কাছ থেকে কিছুই জানতে পারলেন না।

দুপুরবেলা নবনীর ভাই, ভাবী খাবার টেবিলে নবনীর জন্য অপেক্ষা করছে। নবনীর ভাই অবাক হয়ে গেলেন। যে মেয়েটা রোজ তাদের ডেকে খাবার টেবিলে নিয়ে আসতো। সেই মেয়েটা আজ উধাও?
-- তুবা, দেখো তো কি হয়েছে নবনীর? এখনও আসছেনা কেন?
-- সকালেও খায়নি কিছু। আমি এতগুলো কথা বললাম শোনেনি।
নবনীর ভাই রাকিব একটা প্লেটে খাবার নিয়ে নবনীর রুমে গেলেন।
-- নবনী? কি হয়েছে তোর? খাবার টেবিলে আসিস নি কেন? সকালেও নাকি কিছু খাস নি?
-- কিছু না ভাইয়া। এমনিতেই।
-- উহুম, এমনিতে তো এরকম মনমরা হওয়ার মতো মেয়ে নস তুই? শোন আগে খা। তারপর সব আমার সাথে শেয়ার করবি। কেমন?
রাকিব প্লেট টা হাতে নিয়ে সুন্দর করে লোকমা মেখে নবনীর মুখের দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। নবনী এক লোকমা মুখে নিয়ে রাকিবের দিকে তাকিয়ে কাদছে।

ছোটবেলায় বাবা মা কে হারানোর পর থেকে রাকিব কখনো নবনীকে বাবা মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। কিন্তু আজ হঠাৎ নবনীর চোখে জল দেখে বুঝতে পারলো নবনীর জীবনে হয়তো এখনও কোনকিছুর অভাব আছে।

খাওয়া শেষ হলে রাকিব নবনীকে বললো,
-- এবার বল কি হয়েছে?
-- প্লিজ ভাইয়া। আমার কিছুই হয়নি, তুই বোঝার চেষ্টা কর। আমার এমনিতেই মন খারাপ।
-- তুই কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস?
-- না ভাইয়া। প্লিজ, আমি একটু একা থাকতে চাই।
রাকিব নবনীকে আর জোর করলোনা। ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে গেলো। বাবা মা মারা যাবার পর রাকিব নবনীকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিলো। নবনী তখন তৃতীয় শ্রেনীতে। ঈদ চলে এলো। রাকিবের পরনে ছেড়া একটা শার্ট ছাড়া আর কোন জামা ছিলোনা। তার ছোট্ট বোন নবনী ভাই এর কষ্ট বুঝেছিলো। কোথা থেকে যেন একটা টি শার্ট এনে দিয়েছিলো ভাইকে। রাকিব প্রচুর মেরেছিলো ছোট বোনটাকে।
-- বল চুরি করেছিস কেন? কে শিখিয়েছে তোকে এসব?
-- আমি চুলি কলিনি ভাইয়া। আমাকে স্কুল থেকে টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে কিনেছি।
নবনী "র" কে ল উচ্চারণ করতো ছোটবেলায়। রাকিব বুঝতে পারলো, স্কুলের উপবৃত্তির টাকা দিয়ে তার জন্য টিশার্ট টা কিনেছে নবনী। রাকিব ছোট্ট বোনটিকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে কেদেছিলো সেদিন।
তারপর আস্তে আস্তে রাকিব ও নবনী বড় হয়, রাকিব একটা দোকানে থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে শেখে। আস্তে আস্তে অনেক বড় ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে রাকিব।

ছোট্ট নবনী রাকিবের মন বুঝেছিলো। কিন্তু বড় হয়েও এতবছর বাদে ছোট বোনটির মন বুঝতে পারছেনা রাকিব। কি হয়েছে তার মনে? আসলে তার ছোট্ট বোনটি আর ছোট নেই। নারী হয়ে উঠেছে। নারীদের মন বোঝা মুশকিল।

ছোটবোনের এরকম অবস্থা দেখে রাকিব ভাবলো ভালো একটা পাত্র দেখে বিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। তাই কিছু ভালো পরিচিত ছেলের ছবি দেখানোর জন্য নবনীর রুমে গেলো রাকিব।
-- নবনী দেখ তো কোন ছেলেটা তোর পছন্দ হয়?
-- এসব কি ভাইয়া?
-- তোর বিয়ের জন্য পাত্র খুজছি।
-- আমাকে তাড়াতে পারলেই তুই খুশি?
-- না রে বোন, তোর কি হয়েছে বলবিনা আবার চুপ করে মনমরা হয়ে আছিস। এসব সহ্য হয় বল?
-- আমি একজনকে ভীষণ ভালোবাসি ভাইয়া! আমি ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।
-- সে কি তোকে ভালোবাসে?
-- তাকে প্রপোজ করেছিলাম, কিন্তু রাজী হয়নি।
-- তার ঠিকানা টা দে তো।
নবনী ছেলেটার ঠিকানা দিলো, রাকিব ছেলের পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো। ছেলের পরিবার রাজী হলো না।
রাকিব নবনীকে বললো,
-- শোন, ছেলের পরিবার রাজী নয়।
আমাকে আর তোর ভাবীকে দেখ। আমাদের টা তো লাভ ম্যারেজ নয়। তবুও তো আমরা সুখে আছি। এই ছবিগুলো থেকে একজনকে পছন্দ করে নে। দেখবি তুই ও একদিন সুখী হবি।

পাশের রুমে ভাইয়া ভাবী কথা বলছে। নবনীর খুব শুনতে ইচ্ছে করছে বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী রা কি বলে। নবনী দরজায় কান পেতে শুনছে।
-- এই, আমি মা হতে চলেছিো
-- হুম।
-- তুবা, সত্যি আমি আজ অনেক খুশি।

ভাই ও ভাবীর কথা শুনে নবনী ভালোভাবে উপলব্ধি করলো, আসলে বিয়ের পরের ভালোবাসাই প্রকৃত ভালোবাসা। যদিওবা সবার কপালে সে ভালোবাসা জোটে না। তবুও নতুন করে একটা আশায় বুক বেধে রইলো নবনী। আল্লাহ হয়তো তার কপালে অঢেল দুঃখ রেখেছেন। নয়তো অফুরন্ত সুখ।
ধুমধাম করে নবনীর বিয়ে হলো। সাধারণত বিয়ের পর বেশীরভাগ দম্পতি অশান্তি তে ভোগে। নবনীদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুখ হয়তো নেই, কিন্তু সুখের চেয়ে কষ্টের পরিমাণ কম।

বিয়ের কিছুদিন পর নবনী ভাইয়ের বাড়ি এলো। ভাই নবনীর মুখ চোখ দেখে বুঝলো বোনটা সুখেই আছে। নবনী যখন ভাইয়ের সামনে গেলো, ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-- ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দর একটা জীবন উপহার দেওয়ার জন্য।
-- হা হা .. পাগলি একটা। তোর জন্য কি আমি খারাপ কিছু রাখতে পারি? জীবন কারো জন্য থামিয়ে রাখতে নেই। সেটা তুই বুঝতে পেরেছিস।

আসলেই ভাই বোনের ভালোবাসায় কোন ক্ষুত থাকেনা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url